শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর (১২৮৩ বঙ্গাব্দের ৩১ ভাদ্র) হুগলি জেলার দেবানন্দপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী এবং পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায়। পরিবারের প্রথম সন্তান হলেন অনিলা। এছাড়াও শরৎচন্দ্রের দুই ভাই প্রভাসচন্দ্র ও প্রকাশচন্দ্র এবং সুশীলা নামে এক ছোটো বোন ছিল।
রেঙ্গুনে শরৎচন্দ্র রেলওয়ে অডিট অফিসে অস্থায়ী পদে যোগ দেন। সে চাকুরি চলে গেলে রেঙ্গুন থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে পেগুতে এক বন্ধুর সঙ্গে যান। লাঙ্গলাবিনে এক ধান ব্যবসায়ীর সঙ্গে কিছুদিন কাজ করেন। ১৯০৬ সালে বর্মার পাবলিক ওয়ার্কস একাউন্টস অফিসে চাকুরি পান এবং রেঙ্গুনে চলে আসেন। এখানে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত চাকুরি করেন। রেঙ্গুনে তিনি শহরতলির বোটাটং-পোজনটং অঞ্চলে থাকতেন এবং সেখানেই চক্রবর্তী পরিবারের কন্যা শান্তির সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। তাঁদের একটি পুত্রও হয়। ছেলেটি যখন এক বছরের তখন প্লেগে মা ও শিশুটির মৃত্যু ঘটে। তার বেশ কিছু বছর পরে মোক্ষদা নামে একটি কিশোরীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। শরৎচন্দ্র মোক্ষদার নতুন নাম দেন হিরন্ময়ী। তাঁকে লিখতে ও পড়তেও শেখান। তাঁদের কোনো সন্তান হয়নি।
ফণীন্দ্রনাথ পাল সম্পাদিত ‘যমুনা’ পত্রিকার ফাল্গুন ও চৈত্র সংখ্যায় শরৎচন্দ্রের ‘রামের সুমতি’ প্রকাশিত হয় এবং একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক হিসেবে পাঠকমহলে পরিচিত হন। এর আগে অবশ্য সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের উৎসাহে শরৎচন্দ্রের অজ্ঞাতেই ‘বড়দিদি’ ভারতী পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। ভারতবর্ষ ও যমুনা পত্রিকার সম্পাদকদের অনুরোধে সেখানেও লেখা শুরু করেন। পরে ভারতবর্ষ পত্রিকায় তাঁর অধিকাংশ লেখা প্রকাশিত হয় এবং পত্রিকার মালিক গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড থেকে গ্রন্থও প্রকাশিত হতে থাকে। এম. সি. সরকার এন্ড সন্স থেকেও তাঁর বেশকিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
১৯১৬ সালে শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনের চাকুরি ছেড়ে প্রথমে হাওড়ার বাজে শিবপুর ফার্স্ট বাই লেনে ওঠেন। আট মাস পরে একই রাস্তায় অন্য একটি ভাড়াবাড়িতে উঠে যান। সেখানে ন বছর থেকে শিবপুর ট্র্যামডিপোর কাছে আর একটি বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। সেখানে এক বছরের মতো থেকে দিদির গ্রামের কাছে, রপনারায়ণের গায়ে, সামতাবেড়েতে কিছুটা জমি কেনেন। ১৯২৬ সালে সেখানে একটা মাটির বাড়ি তৈরি করে উঠে যান। রেঙ্গুন থেকে বাজে শিবপুরে আসার পর শরৎচন্দ্র তাঁর ছোটোভাই প্রকাশচন্দ্রকে কাছে নিয়ে আসেন এবং তার বিবাহ দেন। শরৎচন্দ্রের মেজভাই প্রভাসচন্দ্র রামকৃষ্ণ মিশনে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন এবং স্বামী বেদানন্দ হিসেবে পরিচিত হন।
শিবপুরে থাকার সময়ে ১৯২১ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আহ্বানে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন। জেলা কংগ্রেসের সভাপতির পদেও ছিলেন। কংগ্রেস কর্মী হলেও সশস্ত্র আন্দোলনের প্রতি তাঁর সহানুভূতি ছিল এবং নানা ভাবে সাহায্যও করতেন।
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ পরিচয় হয় জোড়াসাঁকোর বিচিত্রা আসরে। রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে ১৩২৪ সালের ১৪ চৈত্র সেখানে বিলাসী গল্পটি পাঠ করেন।
১৯৩৪ সালে শরৎচন্দ্র দক্ষিণ কলকাতার ২৪ অশ্বিনী দত্ত রোডে একটি দ্বিতল বাড়ি নির্মাণ করেন। তিনি মাঝে মাঝে সামতাবেড়েতে গিয়েও থাকতেন।
১৯১৩
সেপ্টেম্বর … বড়দিদি (উপন্যাস)
১৯১৪
মে … বিরাজ বৌ (উপন্যাস)
জুলাই … বিন্দুর ছেলে (গল্প-সমষ্টি)
আগস্ট … পরিণীতা (গল্প)
সেপ্টেম্বর … পণ্ডিতমশাই (উপন্যাস)
১৯১৫
ডিসেম্বর … মেজদিদি (গল্প-সমষ্টি)
১৯১৬
জানুয়ারি … পল্লী-সমাজ (উপন্যাস)
মার্চ … চন্দ্রনাথ (উপন্যাস)
আগস্ট … বৈকুণ্ঠের উইল (গল্প)
নভেম্বর … অরক্ষণীয়া (গল্প)
১৯১৭
ফেব্রুয়ারি … শ্রীকান্ত ১ম পর্ব (উপন্যাস)
জুন … দেবদাস (উপন্যাস)
জুলাই … নিষ্কৃতি (গল্প)
সেপ্টেম্বর … কাশীনাথ (গল্প-সমষ্টি)
নভেম্বর … চরিত্রহীন (উপন্যাস)
১৯১৮
ফেব্রুয়ারি … স্বামী (গল্প-সমষ্টি)
সেপ্টেম্বর … দত্তা (উপন্যাস)
সেপ্টেম্বর … শ্রীকান্ত ২য় পর্ব (উপন্যাস)
১৯২০
জানুয়ারি … ছবি (গল্প-সমষ্টি)
মার্চ … গৃহদাহ (উপন্যাস)
অক্টোবর … বামুনের মেয়ে (উপন্যাস)
১৯২৩
এপ্রিল … নারীর মূল্য (প্রবন্ধ)
আগস্ট … দেনা-পাওনা (উপন্যাস)
১৯২৪
অক্টোবর … নব-বিধান (উপন্যাস)
১৯২৬
মার্চ … হরিলক্ষ্মী (গল্প-সমষ্টি)
আগস্ট … পথের দাবী (উপন্যাস)
১৯২৭
এপ্রিল … শ্রীকান্ত ৩য় পর্ব (উপন্যাস)
আগস্ট … ষোড়শী (“দেনা-পাওনা”র নাট্যরূপ)
১৯২৮
আগস্ট … রমা (“পল্লী-সমাজ”-এর নাট্যরূপ)
১৯২৯
এপ্রিল … তরুণের বিদ্রোহ (প্রবন্ধ সংগ্রহ)
১৯৩১
মে … শেষ প্রশ্ন (উপন্যাস)
১৯৩২
আগস্ট … স্বদেশ ও সাহিত্য (প্রবন্ধ-সংগ্রহ)
১৯৩৩
মার্চ … শ্রীকান্ত ৪র্থ পর্ব (উপন্যাস)
১৯৩৪
মার্চ … অনুরাধা, সতী ও পরেশ (গল্প-সমষ্টি)
ডিসেম্বর … বিজয়া (‘দত্তা’র নাট্যরূপ)
১৯৩৫
ফেব্রুয়ারি … বিপ্রদাস (উপন্যাস)
[মৃত্যুর পরে প্রকাশিত ]
১৯৩৮
এপ্রিল … ছেলেবেলার গল্প (তরুণপাঠ্য গল্প-
সমষ্টি)
জুন … শুভদা (উপন্যাস)
© 2023 saratsamity.org | All rights reserved